📒
তোমার কলেজ/ স্কুলে '১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস' উপলক্ষে প্রধান অতিথির এক
মঞ্চ ভাষণ
তৈরি কর।
⤵ উত্তরঃ—
আজ জাতীয় শোক দিবসের এ আলোচনা সভায় আমি প্রথমল বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধা
নিবেদন করছি বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার রূপকার, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ
বাঙালি জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এবং সেই সাথে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ১৫ আগস্টের সেই কালরাতে ঘাতকের নির্মম
বুলেটে নিহত তাঁর পরিবারকে।
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
সম্মানিত সভাপতি ও মঞ্চে উপবিষ্ট বিজ্ঞ আলোচকগণ; সবার কাছেই আমার প্রশ্ন কী অপরাধ
করেছিল বঙ্গবন্ধু? জানি আমার মতো আপনারাও দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এর কোন জবাব
পাবেন না; পৃথিবীর কোথাও এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না।
টুঙ্গিপাড়ার ছেলেটি জীবনের
প্রায় অধিকাংশ সময়ই জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। বাঙালির স্বাধীকার আর
স্বাধীনতা আন্দোলনো যিনি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। নিরন্ন
মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর এক মহান ব্রতে যাঁর কেটে গেছে বিনিদ্র রজনী।
পাকিস্তানের কারাগারে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্য তাঁর চোখের সামনেই কবর খনন করা
হয়েছিল। অথচ তিনি অপকটে বলেছিলেন তাঁর লাশটি বাংলার মাটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তাব তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন। স্বাধীনতা
পরবর্তী বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার মহান উদ্যোগে তিনি যখন দেশ গড়ার কাজে
নেমে পড়েন, আর তখন থেকেই পরাজিত শক্তির দোসররা ওত পেতে থাকে।
ভাইসব,
দেশি—বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে বাংলার ভাগ্যাকাশে আবারও নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা।
১৫ আগস্ট, তখনও ভোর হয়নি, আজানের ধ্বনিও উচ্চারিত হয়নি; ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে
ঘুমন্ত। পরিকল্পনা মফিক কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী সামরিক আমলা, ক্ষমতালোভী চক্র
বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ চালায়। ঘাতকের দল ট্যাংক, কামান, মেশিনগানসহ অত্যাধুনিক
মারণাস্ত্র নিয়ে একযোগে তাঁর বাসভবন লক্ষ করে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে।
স্টেনগান থেকে বঙ্গবন্ধুর বহক লক্ষ করে গুলি করে ঘাতকের দল। তাঁর বুক বিদীর্ণ করে
১৮ টি গুলি।
বন্ধুগণ,
চক্রান্ত চলতেই থাকে।
বাংলাদেশর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চিরতরে ধ্বংস করার
ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। বঙ্গবন্ধুর নামকে বাঙালির মনন থেকে মুছে ফেলার জন্য
হত্যাকারীদের নানাভাবে পুরষ্কৃত করা হয়। সভ্যতার সবচেয়ে বড় মানবতাবিরোধী
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়; ফলে এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিচার নিষিদ্ধ করা হয়।
ঘাতকেরা প্রচণ্ড দম্ভে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। আর স্বাধীনতা
বিরোধচক্র, ক্ষমতালিপ্সুরা ঘাতকের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ঘাতকদের রাষ্ট্রের
গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে বাংলদেশের পবিত্র সংবিধানকে কলঙ্কিত করে। খুনিচক্র
বাঙালির ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রকৃতির
অমোঘ নিয়মে তাদের সেই চেষসফল হয় নি।
সম্মানিত শ্রতৃমণ্ডলী,
ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন সাধকে
ধূলিসাৎ করতে চেয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায় না; তাঁর অবদান জাতও
কখনোই ভুলতে পারে না। বাঙালি জাতির সমস্ত সত্তা জুড়ে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ;
বঙ্গবন্ধু শুধু ব্যক্তি নন; বঙ্গবন্ধু এক অনুপ্রেরণার নাম; বঙ্গবন্ধু বিশ্বখ্যাত
এক প্রতিষ্ঠান— আমাদের ভাবনা-অনুভাবনায় প্রতিনিয়ত তাঁর দীপ্ত উপস্থিতিই যেন
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
সেই বিখ্যাত চরণটির কথা স্মরণ করে দেয়—
"নয়ন — সম্মুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ
যে ঠাঁই।"
পরিশেষে আজকের দিনে এমন একটি বিষয়ের আলোচনা সভার আয়োজন করার জন্য আয়োজকমণ্ডলীকে
ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দূর দূরান্ত থেকে এসে যারা এতক্ষণ আমার বক্তব্য শ্রবণ করলেন
তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, উপস্থিত সুধীবৃন্দের সুস্বাস্থ্যে, সুন্দর জীবন ও
দীর্ঘায়ু কামনা করে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।
0 Comments