ছাত্র জীবনে ইনকামের উপায়
![]() |
অনলাইন ইনকাম |
আমরা যারা ছাত্র আছি। তাদের একটা সময় পর ছাত্র থাকাকালীন সময়েই পরিবারের উপর চাপ কমিয়ে দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেকে বহন করতে হয় বা করা উচিত। কারণ, তুমি যত তাড়াতাড়ি স্বনির্ভর হবে তত তাড়াতাড়ি তুমি জীবনকে চিনতে শিখবে। বাস্তবতাকে তোমার ভেতর আগলে রেখে তোমার জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। আর তাই আজকে আমি আলোচনা করব কিভাবে বা ছাত্রজীবনে টাকা ইনকামের কয়েকটি সেক্টর নিয়ে।
ছাত্রজীবনে অর্থ অনেকভাবে উপার্জন করা যায়। তবে আজকে আমি উপার্জনের ১০টি উপায় নিয়ে কথা বলবো। পরবর্তীতে এগুলোর ভেতর যেগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত সেগুলো নিয়ে ইনশাআল্লাহ লিখবো। ছাত্রজীবনটা শুধু নাক মুখ গুঁজে পড়ালেখা করে কাটিয়ে দেবার জন্য নয়। পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিলে তবেই না ছাত্রজীবন হয়ে উঠবে মনে রাখার মতো! ছাত্রজীবনে শুরু (মাধ্যমিক) থেকেই অর্থ উপার্জনের কথা ভাবা উচিত, কারণ এতে ছাত্রজীবনেই স্বনির্ভরশীল হবার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। আজ তাই ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জন করার দারুণ ১০টি টিপস বলবো, যেগুলোর যেকোন একটি অনুসরণ করলেও এই উপার্জনের ব্যাপারটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।
এক। টিউশনি খুঁজে নাও
আমি আমার লাইফের প্রথম টাকা উপার্জন করি টিউশনি দিয়ে শুরু করেছিলাম। আমার এখনো মনে আছে, দুহাজার হাজার টাকার একটি টিউশনি পেয়েছিলাম ৯ম শ্রেণীর এক ছাত্রকে পড়িয়ে। তাই তোমরা যারা অর্থ উপার্জন করতে চাও তারা টিউশনি করতে পারো। কারণ, ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে সহজ উপায় বোধহয় টিউশনি। টিউশনি করলে তোমার অজান্তে তোমার দুটি উপকার হবে। ১. টাকা আসবে আর ২. তোমার চাকুরীর প্রিপারেশন হয়ে যাবে। কাজেই সুযোগটা মিস করতে বোকামি বনে যেও না। তাই আজ থেকেই টিউশনি শুরু করে দিতে পারো!
প্রশ্ন আসবে, “কিন্তু আমি যে টিউশনি পাই না? আমার কি হবে?” এক্ষেত্রে আমার প্রথম টিউশনির গল্প বলি। আমরা চার বন্ধু মিলে একটা লিফলেট বানিয়েছিলাম, ‘পড়াতে চাই’ লিখে। সেগুলো আমাদের এলাকার দেয়ালগুলোয় সেঁটে দিয়েছিলাম সবাই মিলে। শুনতে অবাক লাগবে, কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা সবাই নিজ নিজ টিউশনি পেয়ে গিয়েছিলাম! তুমিও একই কাজ করতে পারো, সাফল্য আসবেই!
২। ডিজাইন শুরু করো
এটা আমার অনেক পছন্দের একটি কাজ। তবে এই কাজটি সবার জন্যে নয়। কারণ, যারা আগে থেকে ডিজাইন পারে এটা শুধু তাদেরই কাজে আসবে। আমি আমার ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষ থেকেই ডিজাইনের কাজ শুরু করেছিলাম। কিছুদিন পর খেয়াল করে দেখি প্রচুর ডিজাইনিং এর কাজ পাওয়া যাচ্ছে। এখন তো একজন ভালো ডিজাইনারের ডিমান্ড আরো বেশি! এখন টিশার্ট এর ডিজাইন কিংবা লোগো ডিজাইনারদের ডিমান্ড অনেক বেশি। অনেকে তো এটাকে প্রোফেশনাল পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তাই তুমি যদি ভাল ডিজাইনিং করতে পারো তবে বসে কেন? আজ থেকেই তুমি অর্থ উপার্জন শুরু করে দিতে পারো, শুধু নিজের সাম্যর্থের পরিচয় দেবার অপেক্ষা!
৩। ভিডিও এডিটিং কাজে লাগাও
“ভিডিও এডিটিং” এর ধারণাটি খুব বেশি পুরনো না হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ন স্কিল। তোমরা যারা ইউটিউব বা ফেসবুকে ভিডিওগুলো দেখো তারা খেয়াল করবে, প্রতিটি ভিডিও এডিট করা। এই এডিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বর্তমান যুগে সবাই উন্নতমানের ভিডিও চায় কিন্তু ভালো ভিডিও এডিটর পায় না। তাই তোমরা যারা ভালো এডিটিং পারো তোমাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ অর্থ উপার্জনের! কারণ, বর্তমান বাজারে ভিডিও ইডিটরদের অনেক ডিমান্ড। তুমি যদি ভালোমতো ভিডিও ইডিটিং করতে পারো তবে ফাইবার, আপওয়ার্ক এর মতো বড় বড় ই-মার্কেট প্লেসগুলোতে সহজেই বায়ার পেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবে।
৪। লিখতে পারলে কনটেন্ট রাইটার হয়ে যাও
লিখতে আমরা সবাই পারি। কিন্তু ক’জনই বা পারি তার লেখাটা নিউজপেপার এ ছাপাতে? বর্তমান সময় ইন্টারনেটের যুগ হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর লেখা ইন্টারনেটে আসে। এগুলো কারা করে জানো? তোমার মতনই একজন মানুষ। পার্থক্য সে লিখতে লিখতে কনটেন্ট রাইটার হয়ে গেছে আর তুমি এটা নিয়ে ভাবতেছো। তোমার লেখার হাত যদি ভালো হয়, তাহলে তোমার সামনে সুবর্ণ সুযোগ! বাংলা কিংবা ইংলিশ যে ভাষাই হোক, চলবে। প্রচুর ব্লগিং সাইট আছে, নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে যে সব জায়গায় প্রচুর রাইটারের প্রয়োজন। তাই যারা লেখালেখিতে ভালো, এই গুণটি কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনের পন্থা খুঁজে নিতে পারো!
৫। ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং
বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবচাইতে আলোচিত একটি শব্দ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। অন্যভাবে বলা যায়, নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা কে ফ্রিল্যান্সিং বলে। আমার মনে হয় এ কাজটির মানে তোমরা সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছো। কোনো একটা বাইরের কাজ তুমি ফ্রিল্যান্সার হয়েই করে দিচ্ছো। ধরো তুমি ডিজাইনিং এ পারদর্শী, কেউ বা আবার ওয়েব ডেভেলপমেন্টে! এমন আরো অনেক কাজ করে দিতে পারছো ফ্রিল্যান্সার হয়েই। তুমি বাংলাদেশে বসে আমেরিকার যে কারো কাজ করে দিতে পারবে। এমন হাজার হাজার কাজ আছে আপওয়ার্কে কিংবা ফাইবারে গেলেই তুমি সে সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে! তবে তুমি চাইলে এটাকে তোমার প্রফেশনাল জীবনে আনতে পারো। গড়তে পারো তোমার সুন্দর ক্যারিয়ার। তবে এর জন্যে তোমায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ভালোমতো কাজ শিখে নিতে হবে। তুমি ভাবতেও পারবে না আমাদের দেশে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যারা মাস শেষে ১/২ লক্ষ টাকা অনায়াসেই আয় করতে পারে।
৬। এজেন্সির হয়ে কাজ করতে পারো
এটি এক ধরণের কোম্পানি যে কোম্পানিগুলো বড় বড় কোম্পানির জন্য ভিডিও এডিটিং করে দেয়, ডিজাইনিং করে দেয়, প্রেজেন্টেশন তৈরী করে দেয়, কর্পোরেট ইভেন্ট নামিয়ে দেয়। তুমি যদি এরকম কোনো কাজে পটু হয়ে থাকো তাহলে অনেক কোম্পানি তোমাকে খুঁজে নিবে তাদের কাজের জন্যে। এমন কি চাইলে তুমিও যোগ দিয়ে ফেলতে পারো যেকোন এজেন্সিতে!
৭। শখ যখন অর্থ উপার্জনে সহায়ক (ফটোগ্রাফি)
এটি বিশাল এক সুযোগের হাতছানি শিক্ষার্থীদের জন্য। যারা ফটোগ্রাফি পারো, ভিডিওগ্রাফি পারো তাদের হয়ত বিস্তারিত বলার দরকার নেই যে কত ধরণের সুযোগের হাতছানি তাদের সামনে! বন্ধুদের নিয়ে নিজেই একটা ফার্ম খুলে ফেলতে পারো। ফটোগ্রাফি নিয়ে ইউটিউবে একটা ফেমাস মোটিভেশনাল স্পিচ আছে। গল্পটা এরকম ছিল ওনি ২০ টাকা করে নিয়ে একটা করে ফটো তুলে দিতেন৷ এভাবে একসময় ওনি বলিউডের অনেক বড় একজন ফটোগ্রাফার হয়ে যান। ছেলেটি কিন্তু আমাদের দেশের (আমার ঠিক নাম মনে আসছে না।)
৮। ছোটখাট ব্যবসা শুরুর জন্যে ছাত্রজীবন দারুণ সময়
ছাত্রজীবনে ব্যবসা করে অনেক তাড়াতাড়ি পরিচিতি পাওয়া যায়। কারণ, তোমার প্রাত্যহিক জীবনের জন্যে প্রতিদিন তোমাকে অনেক মানুষের সাথে মিশতে হয়। যার কারণে তুমি সহজেই তোমার এ্যাডভারটাইস চালাতে পারবে। বর্তমানে অনেকেই টিশার্ট, পাঞ্জাবীসহ বিভিন্ন ড্রেসে নিদির্ষ্ট কিছু ডিজাইন বা লোগো আর্ট/ পেইন্ট করে এরকম ব্যবসা করে সহজেই সফল হয়েছে। এমন আরো অনেক ছোট ছোট আইডিয়ার মাধ্যমে শুরু হতে পারে তোমাদের ছোট ব্যবসার পথচলা যা কিনা হয়ে উঠতে পারে তোমার স্বপ্নের চেয়েও বড়!
৯। ডিজিটাল যুগে কোডারের জুড়ি নেই
আইসিটির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। তুমি যদি কোডিংয়ে ভালো হও তাহলে তুমি এ্যাপস ডেভেলপমেন্ট করতে পারো, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে পারো, এমন কি হতে পারে তুমি কোনো একটা বড় কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেছো! আমরা যারা বড়বড় কোম্পানি/ ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত আছি, তারা প্রায় সময়ই ডিজাইনার খুঁজি, এনিমেটর খুঁজি এবং অনেক কোডার ও খুঁজছি যারা কিনা আমাদের জন্যে নতুন নতুন ফিচার তৈরি করতে পারবে। তাহলে আর দেরি কেন? কোডার হয়ে থাকলে কাজে লাগাও তোমার স্কিলকে!
১০। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হয়ে যাও
আমরা অনেকেই অনেক ধরণের ইভেন্টে যাই। আমার অনেক বন্ধুই এই ধরণের ইভেন্টে কাজ করছে। হতে পারে ফুড ফেস্টিভাল, কর্পোরেট ইভেন্ট, পহেলা বৈশাখের ইভেন্ট। এমন আরো অনেক কিছু যা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করে পরিচালনা করাই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলোর কাজ। এই কাজের বড় একটা উপকারিতা আছে। তোমার সঙ্গে প্রচুর মানুষের পরিচয় হবে। এবং তুমি অনেক পরিচিতি পাবে। একটা সময় এই পরিচয় তোমার জীবনে অনেক সুযোগ এনে দিবে। তোমার যদি এই ব্যাপারে দক্ষতা থাকে তাহলে এমন অনেক ম্যানেজমেন্ট ফার্ম আছে যেখানে তুমি তাদের সাথে কাজ করতে পারো, কিংবা বন্ধুদের নিয়ে নিজেই একটা ফার্ম খুলে ফেলতে পারো! তাহলে আর দেরি কেন? দ্রুত কাজে লাগাও এই টিপসগুলোকে, খুঁজে নাও কোন বিষয়ে তুমি পারদর্শী, আর ছাত্রজীবনেই শুরু করো অর্থ উপার্জন!
0 Comments